গবেষণা পদ্ধতি ও কোলাবরেটিভ কাজের ধারা

Posted On Mar 11, 2021 |

গবেষণা পদ্ধতি ও কোলাবরাটিভ কাজ যেভাবে সফলভাবে করা যায় তার কার্যধারা বর্ণনা করা হয়েছে

সবকিছুই এখন দ্রুত চলছে — প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুত, সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে অনেকটা চোখের সামনেই, বাড়ছে মানুষ, আর সেইসাথে বাড়ছে ডেটা!

সময়ের প্রয়োজনে গবেষণা এখন হয়ে উঠেছে কোলাবরেটিভ বা সহযোগিতামূলক। এতে সুবিধা অনেক। একসাথে অনেক ফিল্ডের এক্সপার্টরা কাজ করছে যার ফলে প্রোডাক্টিভিটি বেড়েছে। অর্থাৎ অল্প সময়ে দ্রুত প্রোডাক্ট (রিসার্চ পেপার) বের করা সম্ভব হচ্ছে। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে তার পরবর্তী সময়কালে কোলাবরেটিভ কাজের সুযোগ ও আগ্রহ দুইই বেড়েছে।

তরুণ গবেষকদের কোলাবরেটিভ কাজ শুরু করার প্রাথমিক ধাপ হলো রিসার্চ কীভাবে করে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রিসার্চ মেথডলজি নামে একটি বিষয় পড়ানো হয়। গবেষণা পদ্ধতি জানতে এবং তার ব্যবহারিক রূপ দেখতে এই কোর্সের কোন বিকল্প নেই। কাজ করে করে কাজ শেখা যায় তবে সেটি আরো এফিসিয়েন্ট হয় যদি তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করা থাকে। যেটি সম্ভব হয় এরকম কোর্স করার মাধ্যমে।

প্রথাগত কোর্স করলেই যে সবাই সবকিছু শিখে নেবে এমনটি নয়। তবে কোন কিছু সম্পর্কে একেবারে অন্ধকারে থাকার চেয়ে কিছুটা জানা ভালো যদি সেই জানাকে পরবর্তীতে জ্ঞান আহরণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সেরকম প্রচেষ্টা থাকে।

দু:খজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে পড়াশুনা ও গবেষণার জন্য সত্যিকার কোন মোটিভেশন না থাকায় এই কোর্সটিও কাগুজে কোর্সে পরিণত হয়। এরকম কোর্স থেকে শিক্ষার্থীরা সামান্য কিছুই পেয়ে থাকে যেগুলোকে তারা পরবর্তীতে নিজেদের গবেষণায় কাজে লাগাতে পারে। এর কারণ বহুবিদ। অন্যতম কারণটি হলো শিক্ষার সাথে ব্যবহারিক কাজের কোনো সম্পর্ক না থাকা।

এই সমস্যার উত্তরণের একটি পথ আছে যেটি হলো গবেষণায় নেমে পড়া। বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা অনেকেই গবেষণা করতে চায় কিন্তু কীভাবে করবে সেটি অনেক সময় খুঁজে পায়না। এর কারণ মুলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণার পরিবেশ না থাকা কিংবা আনপ্রোডাক্টিভ খাতে সময়ের অপচয় করা। এছাড়া আগেই যেমনটা বলেছি– শিক্ষার্থীদের মোটিভেশনের অভাব আরেকটি বড় কারণ। অনেক সময় শিক্ষক গবেষণায় আগ্রহী কিন্তু শিক্ষার্থী সিস্টেমের ফাঁক ফোকর ব্যবহার করে দায়সারা কাজ করে পার পেয়ে যেতে চায়।

গবেষণা পদ্ধতি

এই লেখায় গবেষণার বিস্তারিত আলোচনা করবো না। গবেষণার পুরো বৃত্তান্তের স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা করেছেন রাগিব হাসান তার গবেষণায় হাতেখড়ি বইটিতে। আমি সেখানকার চুম্বক অংশ তুলে দিচ্ছি।

বইটা ভাগ করা হয়েছে কয়েকটি অংশে। প্রথমে আলোচনা করা হয়েছে গবেষণা কাকে বলে, এর প্রয়োজনীয়তা এবং মূলনীতি নিয়ে। এর পরে আস্তে আস্তে বলা হয়েছে, কীভাবে গবেষণা শুরু করবেন, বিষয় নির্বাচন ও লিটারেচার রিভিউ করবেন। তার পরে ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছে, রিসার্চ পেপার পড়া, বোঝা, এবং নিজের গবেষণাপত্র কীভাবে লিখবেন। গবেষণার সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন আইডিয়া কীভাবে চিন্তা করবেন ও যাচাই করবেন। এছাড়া গবেষণার ফলাফলকে প্রেজেন্টেশন বা বক্তৃতার মাধ্যমে উপস্থাপন করার নানা কৌশল সম্পর্কে লিখেছি। এবং সবশেষে আলোচনা করেছি গবেষণার অর্থায়ন কীভাবে করবেন, এবং গবেষণার সাথে আনুসঙ্গিক অনেক বিষয় যেমন গবেষকদের অভ্যাস, গবেষণার জন্য সময় জোগাড় করা, এসব কিছু।

আমি নতুন করে চাকা আবিষ্কার না করে বরং সংক্ষেপে ধাপগুলো তুলে ধরছি। এটি বিশেষ করে যারা আমার সাথে কাজ করতে চান তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। তাছাড়া নিজেদের গবেষণাতেও এই ধাপগুলো অনুসরণ করা যাবে। হয়তো কাজের ধারা কিছুটা বদলাতে হতে পারে। সেটি নির্ভর করবে কী ধরনের গবেষণা হচ্ছে তার উপর।

সমস্যা কোথায় পাবেন?

সমস্যা অনেক ভাবে পাওয়া যেতে পারে। যারা কোন বিষয়ের অভিজ্ঞ বা অথরিটি তারা খুব সহজেই একটা গবেষণা করার মতো সমস্যা বের করতে পারেন। কিন্তু নতুন গবেষকদের জন্য এটি অনেক কঠিন একটি বিষয়। তাই তাদের জন্য গবেষণা করার মতো সমস্যা খুঁজে পেতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জার্নাল থেকে আর্টিকেল পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এটি সবচেয়ে কম সময়ে ভালো একটি সমস্যা খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। আর দ্বিতীয়টি হলো চোখ কান খোলা রাখা এবং নিজের চিন্তা ভাবনা থেকেই সম্ভাব্য সমস্যা বের করা।

মনে রাখতে হবে সব সমস্যাই গবেষণা করার মতো নয়। অনেক সময় দূরদর্শীতা এবং অভিজ্ঞতার অভাবে একটি কাজ শুরু করে সেটি নানা কারণে শেষ করা হয়ে ওঠে না। প্রথম দিকে তাই অভিজ্ঞ কারো সাথে কাজ করলে কাজটি ভালো ভালোয় শেষ করার সম্ভবনা বাড়ে।

গবেষণার সমস্যা খুঁজতে গিয়ে আপনি প্রথমেই ব্রড একটা সমস্যা নিয়ে চিন্তা করবেন। তার পর সেখান থেকে ছোট ছোট বা স্পেসিফিক একাধিক সমস্যা বের করুন। সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করুন। তারপর সেখান থেকে একটি বা দুটি সমস্যাকে বাছাই করুন। একটি গবেষণায় একটি প্রধান সমস্যাকে লক্ষ্য করে এগুবার পরামর্শ দেবো। এতে করে গবেষণা সেই লক্ষ্যেই স্থির থাকে এবং সকল কর্মকান্ডও ওই লক্ষ্যকে ঘিরে হয় বলে গবেষণাটি ভালো মানের হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

যেমন ধরুন আপনি বাংলাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যানসার সচেতনতা নিয়ে কাজ করবেন বলে স্থির করছেন । ক্যান্সারের অনেক ধরন আছে। এক্ষেত্রে ভালো হবে একটি মাত্র ক্যান্সার (ধরা যাক স্তন ক্যান্সার) নিয়ে কাজ করা। সেই সাথে টার্গেট পপুলেশনে কলেজ শিক্ষার্থীদের না অন্তুর্ভুক্ত করে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করলে আপনার গবেষণাটি আরো ফোকাসড হবে।

গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা

গবেষণার মূল লক্ষ্যই হলো কোন সমস্যাকে তুলে ধরা বা সেটির সমাধানের পথে কী কী করা যায় সে সম্পর্কে রেকমেন্ডেশন দেয়া। সেজন্য গবেষণার মাধ্যমে যে যে প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করা দরকার। এতে করে গবেষণাটি সিস্টেমেটিক হবে এবং গবেষণার শেষে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হলো কী না সেটিও পরিমাপ করা যাবে।

এজন্য গবেষণার প্রশ্ন বা Research Questions (RQs) গুলোকে লিখে রাখতে হবে। অনেকগুলো প্রশ্ন একসাথে লেখা যেতে পারে তবে কয়েকটি স্পেসিফিক প্রশ্নের উত্তর গবেষণায় খোঁজা হবে। এই প্রশ্নগুলোকেই একে একে উত্তর দেয়া হবে কনক্লুসন বা ডিসকাসন সেকশনে।

লিটারেচার রিভিউ

সমস্যা বের করার পর আপনাকে দেখাতে হবে আপনার গবেষণাটি কেন দরকার। অর্থাৎ আপনাকে বোঝাতে হবে আপনার কাজের মোটিভেশন কী? সেজন্য এই সমস্যার উপর ইতোপূর্বে কে কী করেছে এবং তাদের কাজগুলোকে আপনার রিভিউ করতে হবে। লিটারেচার রিভিউ লেখা সহজ নয়। মানে এটিকে খুব সহজ ভাবে নেয়া উচিত নয়। লিটারেচার রিভিউ কেবলমাত্র পূর্বে সম্পাদিত কাজের তালিকা নয় বরং সেই কাজগুলো কীভাবে একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত সেটি বুঝে আপনাকে পাঠকউপযোগী করে উপস্থাপন করতে হবে। এরকম উপস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো আপনার গবেষণার কনটেক্সট বা প্রাসঙ্গিকতা তৈরী করা। আপনার রিভিউ পড়ে যেন সবাই বুঝতে পারে আপনার অবদান কতটুকু এবং কীভাবে।

Your work must be put into proper context and argued what you’ve done and why…

খুব ভালো মানে কাজও কিন্তু ভাল লিটারেচার রিভিউ না থাকার কারণে রিভিউয়াররা বাতিল করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকেই কাজের নতুনত্ব ও অবদান লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।

মেথড অব এনালিসিস বা মেথডলজি

এই অংশে মূলত পরিসংখ্যানিক এনালিসিস করা হয়। একজন গবেষক নানা ভাবে তার গবেষণা করতে পারেন। তবে এপিডেমিওলজিকাল এবং সামাজিক-বিজ্ঞানের গবেষণাগুলোকে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

  • অবজারভেশনাল স্টাডি (Observational study)
  • এক্সপেরিমেন্টাল স্টাডি (Experimental study)

অবজারভেশনাল স্টাডিতে আপনি শুধু অবজার্ভ করবেন বা দেখবেন। সেটি হতে পারে স্টাডি শুরু থেকে ভবিষ্যতের দিকে আপনার স্টাডি সাবজেক্টকে ফলো করা। আবার হতে পারে স্টাডি শুরুর সময় থেকে পিছনের দিকে অরজার্ভ করা। উদাহরণস্বরূপ আপনি দেখতে চাইছেন নেশাদ্রব্য গ্রহণের সাথে স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে কিনা বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় কিনা। এজন্য আপনি টার্গেট পপুলেশনের একটি অংশকে আজ থেকে ফলো করা (অবজার্ভ) করা শুরু করলেন এবং আগামী ৫ বছর তাদের অবজার্ভ করবেন। ৫ বছর শেষে আপনি দেখবেন এদের মধ্যে যাদের স্ট্রোক হয়েছে তাদের কেউ কেউ নেশাকারী এবং কেউ কেউ নয়। এভাবে স্টাডি করে দেখা যাবে নেশাদ্রব্য গ্রহণের সাথে স্ট্রোকের এসোসিয়েসন আছে কিনা। এ ধরনের স্টাডিকে বলে প্রসপেকটিভ স্টাডি।

আবার অন্য ধরনের অবজারভেশনাল স্টাডিতে প্রথমেই তাদেরকে বেছে নেয়া যাদের স্ট্রোক হয়েছে। অর্থাৎ ইভেন্ট যাদের মধ্যে ঘটেছে তাদের বাছাই করে তাদের ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে জানা যে তারা অতীতে কোন নেশাদ্রব্য নিয়মিত গ্রহণ করতো কিনা। এধরনের স্টাডিকে বলে রেট্রোস্পেক্টিভ স্টাডি যা বর্তমানের ইভেন্ট দেখে অতীতকে পর্যবেক্ষণ করা যে ইভেন্টটি ঘটার সাথে অতীতের কার্যকলাপের (নেশাদ্রব্য গ্রহণ) এসোসিয়েশন আছে কিনা।

কমন একটি অবজারভেশনাল স্টাডি হলো ক্রস-সেকসনাল স্টাডি। এরকম স্টাডি পরিচালনা করা হয় একটি পপুলেশনের বৈশিষ্ট্যগুলোর স্ন্যাপশট দেখার জন্য। যেকোন সময়েই এরকম স্টাডি করা যায়। লক্ষ্য রাখতে হবে সময়টি যেন এমন না হয় যে এটি গবেষণার প্রশ্নের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ধরুন আপনি জানতে চাইছেন ঢাকা শহরে প্রতিদিন কত সংখ্যক মানুষ বাইরের জেলাগুলো থেকে আসে। সেজন্য আপনাকে একটি টিপিক্যাল দিন বাছাই করতে হবে যেটার সাথে ঢাকা শহরে মানুষ আসার বিশেষ কোন সম্পর্ক না থাকে। যেমন ইজতেমার মওশুমে অনেক মানুষ ঢাকায় আসে। আপনি যদি সেরকম কোন একটি সময়ে গবেষণার জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন তাহলে আপনি প্রকৃত চিত্র পাবেন না। এক্ষেত্রে আপনার গবেষণার ফল বায়াসড হবে।

অবজারভেশনাল স্টাডিতে শুধুই অবজার্ভ করা হয়, কোন ইন্টারভেনশন দেয়া হয়না।

এক্সপেরিমেন্টাল স্টাডি অনেকটা ফলোআপ বা প্রসপেক্টিভ অবজারভেশনাল স্টাডির মতো। এখানে মূল পার্থক্য হলো এ ধরনের গবেষণায় নতুন ইন্টারভেনশন দেয়া হয় এটা দেখতে যে ইন্টারভেনশনটির কোন এফেক্ট আছে কিনা। ধরা যাক স্ট্রোক কমাতে নতুন একটি ড্রাগ বা লাইফস্টাইলের এফেক্ট আপনি যাচাই করতে চাইছেন। এক্ষেত্রে আপনি দৈব চয়নের মাধ্যমে আপনার গবেষণায় অংশগ্রহণকারিদের একটি অংশকে এই নতুন ড্রাগ বা লাইফস্টাইল দিবেন আর অন্য অংশকে প্লাসিবো দিবেন। প্লাসিবো হলো ঔষধের মতো যেটির আসলে কোন ঔষধি গুন নেই। বিস্তারিত জানতে উইকিতে দেখুন।

এনালিসিস

এই ধাপে স্ট্যাটিসটিক্যাল এনালিসিস করা হবে। ডেটা সংগ্রহের পর সেটিকে ক্লিন করে সামারি রেজাল্ট এবং পরিসংখ্যানের মডেল (যদি দরকার হয়) ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। গবেষণার জন্য নেয়া নমুনা যদি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বমূলক হয় তাহলে গবেষণার ফলকে সেই টার্গেট পপুলেশনের উপর জেনারেলাইজ করা যাবে অর্থাৎ গবেষণার ফলটি ওই জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য এমনটি বলা যাবে।

আর যদি প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা না হয়ে থাকে তাহলে গবেষণার ফলাফল কেবল ওই গবেষণায় অংশগ্রহণকারিদের জন্যই প্রযোজ্য হবে। কোনভাবেই সেটি মূল জনগোষ্ঠীর জন্য সত্যি এমনটি বলা যাবে না। গবেষণার ফল প্রকাশের সময় এই ব্যাপারটি তাই খুব সতর্কতার সাথে লিখতে হবে যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না নয়। অনেক সময় সংবাদপত্রে গবেষণার ফলকে পুরো জনগোষ্ঠীর ফল হিসেবে দেখিয়ে খবর প্রকাশিত হয় যা সত্যের অপলাপ মাত্র।

ডিসকাশন

কোন গবেষণার এটি হলো সার অংশ। ব্যবহারকারিরা এবং যারা পলিসি তৈরি করেন তাদের কাছে এই সেকশনটি গুরুত্বপূর্ণ। তারা এটিই পড়বেন এবং সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা পরিবর্তন করবেন যাতে জনগোষ্ঠীতে পরিবর্তন আসে।

এজন্য এই অংশটি খুব সতর্কতার সাথে এবং অল্পকথায় লিখতে পারলে ভালো। এই অংশে গবেষণার প্রাপ্ত ফলগুলোকে প্রেজেন্ট করা হয় এবং তা পূর্ববর্তী গবেষণার ফলের সাথে তুলনা করে দেখানো হয়। শুধু নিজের গবেষণার ফল আলোচনা করলেই হবে না, একই ধরনের অন্য গবেষণার ফলের সাথে আপনার গবেষণার ফলের তুলনামুলক আলোচনা করতে হবে। এই অংশে গবেষণার উদ্দেশ্য এবং RQ গুলোকে পুনর্ব্যক্ত করে দেখাতে হয় আপনি গবেষণা শুরুর আগে যা জানতে চেয়েছিলেন সেগুলোর উত্তর পেয়েছেন কী না।

এই অংশটি আপনার গবেষণাকে পুনরায় জাস্টিফাই করবে। সেটি সম্ভব হবে ভালো করে সেকশনটি উপস্থাপন করার মাধ্যমে। এরকম উপস্থাপনা করতে পারা সহজ নয়। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এটি অর্জন করা যায়। শেখার জন্য ভালো জার্নালের আর্টিকেল থেকে আপনার গবেষণার সাথে মিল আছে সেরকম আর্টিকেলের ডিসকাশন সেকশন পড়ার পরামর্শ দিব। পড়ার মাধ্যমে জানা হবে আর সেটি নিজের গবেষণাপত্রে লেখার মাধ্যমে চর্চা হবে।

কনক্লুশন বা উপসংহার

পরিশেষে উপসংহারে আপনি আপনার গবেষণার ফলাফল সংক্ষেপে আবারো লিখবেন। অনেক জার্নালে কনক্লুশন এবং ডিসকাশন সেকশন দুটি একত্রে লেখা হয়। সেক্ষেত্রে উপসংহারটিকে আপনার ডিসকাশন সেকশনের শেষ প্যারা হিসেবে লিখতে পারেন। এই সেকশনে পলিসি রেকমেন্ডেশন দিতে পারেন। সেই সাথে আপনার কাজের সীমাবদ্ধতাগুলোও তুলে ধরতে পারেন। সবশেষে ভবিষ্যতে আরও কী কী করা যেতে পারে সেগুলোর একটি আউটলাইন দেয়া যেতে পারে। এ থেকে বোঝা যাবে এই গবেষণায় আপনার অবদান কতটুকু এবং আরও কী কী কাজের সুযোগ আছে যা আপনি কিংবা আগ্রহী গবেষকগণ চিন্তা করতে পারেন।

কাজের ধারা

অনেকেই অনেক ভাবে কাজ করতে পারে তবে আমি আমার মতো করে একটি ওয়ার্কফ্লো দিচ্ছি। আমি প্রথম এবং শেষ থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে ভিতরের দিকে কাজ করি। লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও লিটারেচার রিভিউ নিয়ে যুগপদ কাজ করি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখা হয়ে গেলে এবং রিটারেচার রিভিউ শেষ হলে RQ গুলো কী ভাবে উত্তর করবো সে লক্ষ্যে ডিসকাশন সেকশনে কাজ করি। ডিসকাশন পুরো লেখা হয়না কিন্তু টেমপ্লেট তৈরী করা হয় যেখানে এনালিসিস (ধাপ ৪) থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো দিয়ে পরবর্তীতে সম্পূর্ণ করা হয়।

তবে এই ওয়ার্কফ্লো নির্ভর করে কী ধরনের গবেষণা হচ্ছে তার উপর। সাধারণত ধাপগুলো এরকম হতে পারে

সমস্যা > প্রশ্ন > লিটারেচার রিভিউ > ডিসকাশন টেমপ্লেট > এনালিসিস + মেথডলজি > ডিসকাশন > উপসংহার

কিংবা হতে পারে

সমস্যা > প্রশ্ন > লিটারেচার রিভিউ > মেথডলজি> ডিসকাশন টেমপ্লেট + এনালিসিস > ডিসকাশন > উপসংহার

শেষ কথা আশা করি লেখাটি পড়ে আপনার গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে একটি রিভিউ হলো। আপনি কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে সেটি মন্তব্যে জানালে খুশি হবো। সেই সাথে কোন পরামর্শ যদি থাকে সেটাও জানাতে পারেন।।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

কোলাবরেশন চলুক!

Photo by Hannah Busing on Unsplash

Want to get notified of  new posts?

I have read and agree to the terms & conditions.